রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১০:১৬ অপরাহ্ন
কুলাউড়া প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ফেসবুকে প্রথম লাইভকারী তরুণ অলিউর রহমান নয়নের বাবা আশিক মিয়াকে শান্তনা দিয়ে কেউ কান্না নিবারণ করতে পারছিলেন না। হাউ মাউ করে কেঁদে বিলাপ করছিলেন, “আমার পুয়ার (ছেলের) পুড়া মুখ দেখমু জানলে, তারে চাকরিত দিতাম না। আমার পুয়ারে আমি কিলা মাটি দিতাম। তার টেকায় সংসারের অভাব কিছুটা দুর অইছিল। বাকি হুরুতা (সন্তানদের) লইয়া কিলা দিন কাটাইতাম। আমার সব শেষ।”
০৬ জুন সোমবার সকাল ১১টায় নয়নের লাশ কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলী গ্রামে এসে পৌঁছে তখন পরিবারের লোকজনের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে পরিবেশ। গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয়-স্বজনরা বিলাপ আর আহাজারি করছেন। গোটা এলাকার শত শত মানুষ আগে থেকেই ভীড় জমান নয়নকে শেষবারের মত দেখতে। যেই দেখেছেন নয়নের জন্য অশ্রু বিসর্জণ করেছেন। ফটিগুলী গ্রামের মসজিদের সামনে বেলা দু’টায় জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ জানাযায় অংশ নেন।
জানা যায়, পরিবারের ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সে সবার বড় ছিলেন অলিউর রহমান নয়ন। নয়নের মা হাসিনা বেগমের কয়েক বছর আগে অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। এরপর নয়নের বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। সৎ মা রোশনা বেগম ও বাবার সঙ্গেই বসবাস করতেন নয়ন। স্থানীয় ফটিগুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি ও কর্মধা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে সে। বাবা, সৎ মা আর ভাই বোনদের নিয়ে অভাব অনটনের সংসারের হাল ধরতেই অল্প বয়সে নয়নকে পড়ালেখা বাদ দিয়ে প্রায় ৫ মাস পূর্বে একই গ্রামের বাসিন্দা মামুন মিয়া ঠিকাদারের মাধ্যমে সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে চাকরিতে যোগ দিতে হয়েছিলো। মাসে ১০-১২ হাজার টাকা রুজি করত। তাই দিয়ে সংসার চলত তাদের। ভাই বোনরা সবাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় নয়নের মৃত্যু তাদের মধ্যে তেমন প্রভাব ফেলেনি। তার মৃত্যুতে পরিবারের স্বপ্নেরও মৃত্যু হলো।
উল্লেখ্য, শনিবার (০৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দূর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলের একটু দূর থেকে সেখানে কর্মরত শ্রমিক কুলাউড়া বাসিন্দা অলিউর রহমান নয়ন (২৩) অগ্নিকান্ডের ঘটনা নিজের ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। নেট
দুনিয়ায় নয়নের লাইভ এখন ভাইরাল। লাইভ চলাকালীন হঠাৎ ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। আশপাশের সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়। হাত থেকে তার ফোনটা পড়ে যায়। কয়েক মিনিট পর লাইভও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ডিপোর বাইরে থাকা সহকর্মীরা খোঁজ করতে থাকেন। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে নয়ন মারা যায়। রাত ২টার দিকে নয়নের লাশ আসে চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে। পরদিন তার লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসলে সেখান থেকে তার পরিবারের স্বজনরা লাশ নিয়ে কুলাউড়ায় ফিরে আসে।